আয়রন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ


আয়রন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

 

আয়রন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উপাদান হিমোগ্লোবিন হল আয়রন ঘটিত প্রোটিন যা লোহিত রক্তকণিকায় অবস্থান করে আয়রন এই হিমোগ্লোবিনের গঠন সহ বিভিন্ন উৎসেচক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

আমাদের শরীরে আয়রন মূলত ফেরাস আয়ন রূপে শোষিত  হয়। পাকস্থলীতে খাদ্যস্থ জৈব লোহা হাইড্রোক্লোরিক এসিড দ্বারা ফেরিক আয়নে পরিণত হয়। এই ফেরিক আয়ন ভিটামিন সি, সিস্টিন, গ্লুটাথিয়নের উপস্থিতিতে ফেরাস আয়নে পরিণত হয়। এই ফেরাস আয়ন ফেরো অক্সিডেজ উৎসেচকের সাহায্যে জারিত হয়ে ফেরিক আয়ন গঠন করেন। যা অ্যাপোট্রান্স ফেরিন এর সাথে যুক্ত হয়ে ট্রান্সফেরিন গঠন করে। যা শরীরের বিভিন্ন অংশে বাহিত হয়। এই ট্রান্সফেরিন

অস্থিমজ্জায় ফেরাস আয়নকে উন্মুক্ত করে যা  হিমোগ্লোবিন গঠন করে। রক্ত রসের এই আয়রন যকৃত, প্লিহাতে ফেরিটিন হিমোসিডারিন রূপে সঞ্চিত থাকে

 

শরীরে কেন আয়রনের ঘাটতি দেখা যায়?

 

. পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ যেমন- সিলিয়াক, ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল জাতীয় রোগের কারণে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা যায়

 

. দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করলে

 

. অর্শ বা পাইলস সংক্রান্ত রোগে রক্তক্ষরণ হলে

কৃমির সংক্রমণ হলে

. দীর্ঘদিন ব্যথার ওষুধ সেবন করলে

. পাকস্থলী সার্জারি সংক্রান্ত রক্তক্ষরণ

. ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে

. নন স্টেরয়েডাল এন্টি ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ সেবন করলে

. মহিলাদের ঋতু চক্রের কারণে অনেক রক্তক্ষরণ হয়। ফলে আয়রনের ঘাটতি দেখা যায়

 

১০. গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে ভ্রূণের গঠনের জন্য অতিরিক্ত আয়নের প্রয়োজন হয় ফলে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে

 

আয়রনের ঘাটতি হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়?

 

. রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া

পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন 8 থেকে 10 মিলিগ্রাম নারীদের ক্ষেত্রে ১৮ গ্রাম আয়রন প্রয়োজন

শরীরে যখন আয়রনের ঘাটতি তৈরি হয় তখন লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে শরীরে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া দেখা দেয়

 

. ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া

 

শরীরের সকল কোষে রক্ত পরিবহনের জন্য আয়রনের প্রয়োজন হয়। আয়রনের অভাবে কোষে রক্ত সরবরাহ ব্যহত হয় ফলে পর্যাপ্ত রক্তের অভাবে ত্বকের কোষগুলো ফ্যাকাসে হয়ে যায়

 

. মাথা ব্যথা

হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সি হিমোগ্লোবিন গঠন করে। অক্সিহিমোগ্লোবিন শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়

আয়রনের অভাব হলে হিমোগ্লোবিনের অভাব হয়। ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিবহনও ব্যহত হয়

মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবে  মাথা ব্যথা, অস্বস্তি দেখা যায়

 

. জিহ্বার রং পরিবর্তন

 

মায়োগ্লোবিন হলো এক ধরনের আয়রন যুক্ত প্রোটিন। মায়োগ্লোবিনের অভাবে জিহ্বার রং পরিবর্তন হয়ে যায়। জিহ্বায় কালো দাগ দানা দেখা যায়। মুখে শুস্কভাব পরিলক্ষিত হয়

 

. বুক ধড়ফড় করা

 

আয়রনের ঘাটতির কারণে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা পরিলক্ষিত হয়। ফলে হৃদযন্ত্রে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা যায়। ফলে হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যহত হয়। এমনকি হৃদযন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে

 

. নখের ভঙ্গুরতা

আয়রনের অভাব হলে নক একটু বড় হতে না হতেই ভেঙে যায়

 

.বিভিন্ন অঙ্গের ভারসাম্যহীনতা

মস্তিষ্ক স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য শরীর থেকে ডোপামিন নামক এক প্রকার হরমোন নিঃসৃত হয়। আয়রনের ঘাটতি হলে এই ডোপামিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। ফলে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়

 

এছাড়াও চুল পড়া, তলপেটে ব্যথা, প্রস্রাবের সাথে রক্তক্ষরণ, ক্লান্তি অনুভব করা, খাবারের অরুচি,

শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়

 

আয়রন সমৃদ্ধ কিছু খাবার

 

সাধারণত প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়রনের

শোষণ হার, উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়রনের শোষণ হার অপেক্ষা বেশি

 

নিম্নে কিছু আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের উৎস উল্লেখ করা হলো:

 

উদ্ভিজ্জ উৎস

বেদানা, পালং শাক, মটরশুটি, ব্রকলি, বিটরুট,আপেল, কলাকিসমিস, ডুমুরবিটমসুর, ডালিম, সয়াবিন ইত্যাদি

 

প্রাণিজ উৎস

কলিজা, মাছহাঁস মুরগির মাংসসামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি

 

 

*

Post a Comment (0)